ইঁদুর : কৃষি ব্যবস্থা ও জাতীয় উন্নয়নে হুমকি
মোঃ বেনজীর আলম
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর। কৃষি এখনও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা এবং অধিকাংশ জনগণই জীবন জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে, তার মধ্যে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি উল্লেখ করার মতো এবং বিশ্বের যে কোন উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণও বটে। কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা বর্তমান সরকারের কৃষি ভাবনার এক বাস্তব প্রতিফলন। বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন এবং স্বল্পমূল্যে জনসাধারণের মাঝে খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। দেশের ক্রমবর্ধনশীল জনসংখ্যা এবং কৃষি জমি হ্রাসের প্রেক্ষাপটে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য দূর করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনা, কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের সর্বাত্মক প্রয়াস ও কৃষক ভাইদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ দেশে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক প্রতিকূল পরিবেশ যেমন- অকাল বন্যা, রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যতম অন্তরায়, যা একদিকে যেমন উৎপাদনে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলছে অপরদিকে দেশের সার্বিক পরিবেশসহ কৃষিব্যবস্থা ও জাতীয় উন্নয়নকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তদুপরি রয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ মে. টন খাদ্যশস্য কেবল ইঁদুরই নষ্ট করে থাকে। মানুষের আশেপাশে থেকে এরা প্রতিনিয়ত সম্পদ ও শস্যের ক্ষতি করেই চলেছে। সার্বিকভাবে ইঁদুর বিভিন্ন প্রকার রোগের বাহক বিধায় জনস্বাস্থ্য ও নিরাপদ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইঁদুর খুব চতুর ও দ্রুত বংশ বিস্তারকারী প্রাণী। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, এক জোড়া ইঁদুর তার জীবদ্দশায় প্রায় তিন হাজার বংশধর সৃষ্টি করতে পারে।
কাজেই ফসল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধে ও দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য ইঁদুরকে একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সকল স্তরের জনগণকে ইঁদুর নিধন কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ইঁদুর নিধন অভিযান বাংলাদেশে নতুন নয়। বিগত ১৯৮৩ সাল থেকে প্রতি বছর এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবারও বিগত অভিযানের ন্যায় ‘জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২’ এর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আশা করি এ অভিযানে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পাবে। কৃষক, সরকারি, বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবেন। ফলে ইঁদুর দ্বারা ফসল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পাবে। আমি ‘জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২’ এর সার্বিক সফলতা কামনা করছি।
লেখক : মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফোন : ৫৫০২৮৩৬৯, ই-মেইল :dg@dae.gov.bd